মাগুরায় গৃহবধূ হত্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বাদীকে হত্যার হুমকি

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০ সময়ঃ ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ

মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাকাখর্দ গ্রামে গৃহবধূ হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিপক্ষের আত্মীয়স্বজন দ্বারা  বাদীকে ও বাদীর পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে মামলার  বাদী মোঃ ফরিদ হোসেন ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন যার নম্বর ৯৭৪ তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০।
 গত ০৬ সেপ্টেম্বর হেনা বেগম (৩৪) নামে এক গৃহবধূর হত্যা হয়েছিল তার স্বামীর বাড়ীর পাশের একটি বাগানে।   এ বিষয়ে তার স্বামী সহ  ৪/৫ অজ্ঞাত লোকের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছিল। যাহার নাম্বার মামলা নং ৯ মাগুরা সদর থানা তারিখ ৬/০৯/২০ ধারা  ৩০২/৩৪।
তার স্বামীর বাড়ীর পাশের একটি বাগানে ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
 তার মৃতদেহের গলায় ফাঁসসহ শরীরে একাধিক ক্ষত ছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে হেনার স্বামী মফিজুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।
নিহত হেনা বেগম মফিজুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি ঝিনাইদহের অচিন্ত নগর।
 নিহত হেনা বেগমের এর ভাই ফরিদ জানান,   ৬ সেপ্টেম্ব দুপুর তিনটার দিকে আমাদের এলাকায় চৌকিদারের মাধ্যমে আমরা খবর পেয়েছিলাম আমার বোন হেনা  বেগম  কে নির্মমভাবে  জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন বিগত ১৮  বছর আগে পাকা খার্দ্দ গ্রামের মোঃ মফিজুর রহমান পিতাঃ মৃত রমজান বিশ্বাসের ছেলের সাথে আমার বোন হেনা বেগমের  বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকেই মোঃ মফিজুর রহমান ও  তার ভায়েরা এবং পরিবারের লোকজন  বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের জন্য আমার বোনকে  নানা ভাবে নির্যাতন করতো। কখনো কখনো মফিজুর রহমানের বড় ভাই মিজানুর রহমান, ছোট ভাই জিল্লুর রহমান, ও কামরুজ্জামান আমার বোন কে তালাক দেওয়ার কথা বলে আমার ভগ্নিপতিকে চাপ দিত।যে তালাক দিয়ে দে যত টাকা লাগে আমরা দিব।কিছু দিন আগেও আমার বোনের ব্যবহারকৃত  আসবাবপত্র সহ তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় আমার ভগ্নপতির ভাই মিজানুর রহমান।  আমার বোন জামাই মোঃ মফিজুর রহমান কে আমরা সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ছয় লক্ষ টাকা প্রদান করি। তারপর উনি সৌদি আরব থেকে ফেরত এসে একাধিকবার যৌতুকের জন্য আমার বোনকে নির্যাতন করত।  একাধিকবার আমরা বিভিন্ন ভাবে জমিজমা বিক্রি করে যৌতুকের টাকা প্রায় ০৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে সে আরও  ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। গত ০৫ সেপ্টম্বর আমরা তাকে ২০০০০ টাকা একটি স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে উত্তোলন করে প্রদান করি। এই টাকা নিয়ে আমার বোন মফিজুর রহমানের বাসায় যায়।  তারপর আমরা তার মৃত্যুর খবর পায়। হত্যার বর্ণনা দিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন চাকু দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে জবাই করা হয়েছে। সরেজমিন অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, মফিজুর রহমান ও তার ভাই মিজানুর রহমান, জিল্লুর রহমান, কামরুজ্জামান ও তার ভাতিজা রিপন বিশ্বাস বিভিন্ন সময় হেনা  বেগমের এর উপর নির্যাতন চালাতো এবং তাকে তালাক দেওয়ার কথা বলতো। এমনকি হেনা বেগমের ছেলে- মেয়েদেরই তার চাচারা বাড়িতে গেলে তাড়িয়ে দিত।কোন দিন আর আসবি না বলে শাসানো হত।   এলাকাবাসী জানান যে তারা দীর্ঘদিন যাবত ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্নভাবে অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ  করে মানুষকে হয়রানি করে আসছে এবং বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে।তাদের এহেন কার্যক্রম যদি বন্ধ না করা যায় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে আমরা মনে করছি।
নিহতের ভাই  অভিযোগ করে বলেন  ১। মোঃ মফিজুর ২। মিজানুর রহমান ৩। জিল্লুর রহমান ৪। কামরুজ্জামান, সর্ব পিতা রমজান বিশ্বাস   ৫।রিপন বিশ্বাস পিতা রওশন বিশ্বাস সহ পরিবারের লোকজন  আমার বোনকে সহ্য করতে পারত না। যেমন কিছুদিন আগের একটি ঘটনা আমার বোন তার শশুরবাড়ীতে গেলে মিজানুর রহমান আমার ভগ্নিপতি কে বলেন তোকে না বলছি তোর এই বউকে হয়  তালক দিবি না হলে মেরে ফেলতে। যত টাকা লাগে আমি দিব। আমি এই ইউনিয়ানের হর্তাকর্তা সুতরাং কিছুই হবে না। এই কথা বলার পর আমার ভগ্নিপতি, কামরুজ্জামান, জিল্লুর  রহমান  রিপন  বিশ্বাস  হাতুড়ি, স্যানদা দিয়ে আমার বোনের উপর আক্রমণ করে।  আল্লাহর রহমতে ঐ দিন আমার বোন দৌড়ে পালালে বেচে যায়।সুতরাং এরাই  আামার বোনকে পরিকল্পিতভাবে  জবাই করে হত্যা করেছে।এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে আমি ৫ জনের নামে অভিযোগ লিখেছিলাম কিন্তু  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে বলেন মোঃ মফিজুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেন আর বাকি  অজ্ঞাত নামা দিয়ে তদন্তকরে কারও সংপৃক্তা পাওয়া গেলে অন্তরভূক্তি করা যাবে  ।তাই মোঃ মফিজুর রহমান পিতাঃ রমজান বিশ্বাস কে ১ং আসামি আর বাকি অজ্ঞাত  করে মাগুরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলাম।
মামলা করার পর থেকে  মিজানুর রহমান, কামরুজ্জামান, জিল্লুর রহমান ও রিপন বিশ্বাস আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের কে সুকৌশলে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এবং এলাকায় প্রকাশ্যে বলে বেড়ায় ক্ষমতা আছে বলে আমাদের নামে মামলা হয়নি। আমাদের আর কিছুই হবে না।
তার ধারাবাহিকায় ১৮ সেপ্টেম্বর আমি আমাদের স্থানীয় গোয়ালপাড়া বাজারে গেলে এক নম্বর আসামির ভাই  জিল্লুর রহমানের স্যালক ঝিনাইদহ সদরের পূর্ব নারায়নপুর  গ্রামের মোশারফ মুন্সীর  হোসেনের ছেলে মাহবুবুর রহমান( ৩৫)আমাকে বলে মামলার কারনে  যদি আমার বোন- ভগ্নিপতির  সংসারে কোন রুপ অশান্তি হয় তাহলে আমি তোদেরকে দেখে নিব বলে সবাইকেহত্যার হুমকি দেয়। এবং মামলা তুলে নিতে  ও বলেন।
ফরিদ আরো বলেন, সব আসামি এজহার ভূক্ত না হওয়ায় কৌশলে তাদের আত্মীয়দের দিয়ে এমন ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।এতে আমরা উদ্বিগ্ন এবং দিশাহারা। এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ভবিষ্যতে নিরাপত্তা বিধানের জন্য ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি যাহার নাম্বার  ৯৭৪ তারিখ ১৯/০৯/২০।  এতেই  আমাদের ধারণা  স্পষ্ট পরিবারের  সবাই  মিলে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G